কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনির রোগগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে কিডনিতে পাথর । এ কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। একটু সচেতন হলেই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায় । অনেক কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনিয়মিত কিছু খাদ্যাভাসের জন্য নিজেরাই নিজেদের অজান্তেই রোগ বাধিয়ে নেই। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত ঘুম ও শরীর চর্চার অভাবে অনেক সময় আমরা জটিল রোগের সম্মুখীন হই।
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের সাধারণ কিছু সমস্যার মতই কিডনিতে পাথর হওয়া যুক্ত হয়েছে। চারপাশের কেউ না কেউ এই সমস্যায় ভুক্তভোগী। নারী পুরুষ উভয়ই এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কিডনির পাথর কী?
আমাদের শরীর থেকে প্রস্রাবের সঙ্গে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে কিডনির ভুমিকা অপরিসীম। কিডনিতে লবনের সঙ্গে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশে একধরনের কঠিন পদার্থের জন্ম হয় যাকে আমরা কিডনির পাথর বলে থাকি। এই পাথরের আকার ছোট লবণের দানা বা কখনো কখনো পিংপং বল এর মত বড় হতে পারে। এই পাথরের উপস্থিতি আমরা সহজে বুঝতে পারি না যতক্ষণ না এটি আমাদের মূত্রনালির গায়ে ধাক্কা দেয় এবং একে সংকীর্ণ করার ফলে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসা না করলে ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং একসময় একেবারেই অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকা নির্ভর করে কিডনিতে পাথরের ধরন, অবস্থান, আকৃতি উপর এবং পরবর্তীতে সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর। অনেক সময় রোগীর মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায় এই পাথর।
আরওবিস্তারিতজানতেএবংসরাসরিডাক্তারেরপরামর্শেরজন্যকলকরুন–
কিডনিতে পাথর কত প্রকার?
রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে, এই ধরনের কিডনি পাথর হয়:
- ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর
- ক্যালসিয়াম ফসফেট পাথর
- ইউরিক অ্যাসিড পাথর
- সিস্টাইন পাথর
কিডনিরপাথরহওয়ারকারণঃ
কিডনিতে পাথর তৈরির কারণ জানার জন্য অনেক গবেষণা হয়েছে এবং আজও চলছে কিন্তু কিডনিতে পাথর জমা হওয়া বা তৈরি হওয়ার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যা কিডনিতে পাথর তৈরির কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যেমন –
- খাবারে অধিক লবণ।
- দৈনিক অল্প পানি পান।
- কম ফলফলাদি ও শাকসবজি খাওয়া।
- বেশি বা খুব কম ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া।
- কিডনিতে বারবার সংক্রমণ এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করা।
- যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকে তাদেরও পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
- যেসব লোকের ইনফ্লামেটরি বাওয়েল রোগ থাকে, তাদের কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হলো লাল মাংস যেমন-গরু ও খাসির মাংস এবং পোলট্রির মাংস বেশি বেশি খাওয়া।
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা মূত্রাশয়ে প্রদাহ কিংবা বাতের ব্যথার উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
- টপিরামেট জাতীয় (এটা টোপাম্যাক্স হিসেবে পাওয়া যায়) ওষুধ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো সাধারণত মাইগ্রেনের রোগে ব্যবহার করা হয়।
- অতিরিক্ত অক্সালেট জাতীয় শাকসবজি যেমন- পুঁই শাক, পালং শাক, বিট ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
কিডনিতে পাথর হওয়ার উপসর্গঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তবে-
- কাঁপুনি দিয়ে জ্বর।
- ঘোলাটে এবং দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব।
- ব্যথার সাথে সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- মাঝে মাঝে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট ছোট পাথর যেতে পারে।
- রক্তবর্ণের লাল প্রস্রাব, ব্যথা, জ্বালাপোড়া থাকতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা অল্প একটু প্রস্রাব হয়েই আর না হওয়া।
- হঠাৎ তলপেটে বা পেটের নিচের দিকের দুই পাশে বা কোমরে তীব্র ব্যথা হওয়া।
কিডনির অবস্থানে (কোমরের পিছন দিকে) ব্যথা। এই ব্যথা তীব্র তবে সাধারণত খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না। ব্যথা কিডনির অবস্থান থেকে তলপেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে আকস্মিকভাবে পেট বা পিঠে ব্যথা অনুভব করা কিংবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা মানেই কিডনিতে পাথরের লক্ষণ নয়, তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন, কারণ হতে পারে এটি মারাত্নক কোন রোগের লক্ষণ। এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই কিডনিতে পাথরের জন্য এমন হচ্ছে কিনা।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
বিরক্তিকর লক্ষণ ও উপসর্গের জন্য একজন নেফ্রোলজিস্ট দেখুন – জ্বর এবং বমি বমি ভাব সহ তীব্র ব্যথা; প্রস্রাবে রক্ত; বা প্রস্রাব করতে অসুবিধা।
কিডনিতে পাথর থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন, ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ খান, গ্রিন টি বা ক্র্যানবেরি জুস পান করুন।
কিভাবে কিডনি পাথর নির্ণয় করা হয়?
আপনি যদি কিডনিতে পাথরের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব করেন, অবিলম্বে একজন নেফ্রোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন। আপনার ডাক্তার/নেফ্রোলজিস্ট সাধারণত এর ভিত্তিতে অবস্থা নির্ণয় করবেন:
1. চিকিৎসা ইতিহাস
2. পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা
3. পরীক্ষা:
রক্ত পরীক্ষা
ইমেজিং পরীক্ষা:
– সাধারণ পেটের এক্স-রে সহ বা ছাড়া আল্ট্রাসাউন্ড
– নন-কনট্রাস্ট সিটি স্ক্যান
কিডনিতেপাথরেরচিকিত্সাঃ
কিডনির অবস্থানে ব্যথা এবং রক্তবর্ণের প্রসাব হলে চিকিৎসকরা সাধারণত দুটো সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেন। একটি হল কিডনির ইনফেকশন, অন্যটি কিডনিতে পাথর। তাই কিডনির এক্সরে, আলট্রা সনোগ্রাম এবং প্রসাবের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি আর যথাযথ ওষুধ খেলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অস্ত্রপচারই একমাত্র উপায়। কিডনিতে পাথর হলেই অপারেশন করতে হয় এমন ধারণা ঠিক নয়। চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের অবস্থান, আকার, ধরন, কিডনির কার্যকারিতা এবং প্রস্রাবের পথে প্রতিবন্ধকতার ওপর।
কিডনিতেসার্জারীবিহিন হোমিওপ্যাথিক রেমেডিসসম্পর্কে জানতেফ্রীপরামর্শপেতে কল করুন –
ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব, কারণ ছোট আকৃতির পাথর সাধারণত প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে পাথর অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার বা যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর ভেঙে বের করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার না করে ওষুধ সেবন করার মাধ্যমে পাথর বের করা বা পাথর আর বড় না হওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
অস্ত্রোপচারের পরও আবার পাথর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবন করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, দৈনিক ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করলে শরীর থেকে উপযুক্ত পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায় এবং কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি এবং জটিলতা কে কমিয়ে আনে।
আরও বিস্তারিত জানতে এবং সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শের জন্য কল করুন – +1-347-596-3111