চর্ম রোগ বা ত্বকের রোগ

চর্ম রোগ (ত্বকের রোগ) কি?

মানব দেহের যতগুলো ভয়ঙ্কর প্রকৃতির রোগ আছে তার মধ্যে চর্মরোগ অন্যতম। তবে সব চর্মরোগই ভয়ঙ্কর প্রকৃতি নয়। চর্ম বা ত্বক মানবদেহের প্রতিরক্ষামূলক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ত্বককে জ্বালাতন করে এমন যেকোনো কিছুর কারণে ফোলাভাব, চুলকানি, জ্বালা এবং লালভাব দেখা দেয় যা ত্বকের গঠনকে প্রভাবিত করে। অসুস্থতা বা সংক্রমণের কারণেও ত্বকের পরিবর্তন ঘটতে পারে। ত্বকের ব্যাধিগুলি ত্বকের রঞ্জকতা বৃদ্ধি/হ্রাস, সংবেদনশীলতা, স্কেলিং, ফোসকা, পিণ্ড এবং ফুসকুড়ি হতে পারে।

প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ কি কি?

চর্মরোগেরপ্রধানলক্ষণউপসর্গহল

কি কি ধরনের চর্মরোগ আছে

ত্বক হলো আপনার দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। বিভিন্ন রকম চর্মরোগ আছে যা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশ চর্মরোগে প্রায় সমজাতীয় উপসর্গ প্রদর্শন করে। তাই সেগুলির মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে ভালো করে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন প্রকারের চর্মরোগ আছে যেমন একজিমা সহ ব্যাকটোরিয়া, ফাংগাই, জান্তব পরাভুক এবং ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি ইত্যাদি নানান ধরনের চর্মরোগ যেমন— চুলকানি, ফুঁসকুড়ি, দাঁদ, একজিমা, অ্যালার্জি, লোমফোঁড়া, ঘা, আম বাত এসব রোগ হরহামেশাই বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কখনো কখনো এটি দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করে। বছরের সবসময়ই এই রোগ হতে পারে। শীতকালে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এসময় শুষ্ক ত্বক ফেটে যায়, আকান্ত স্থান পুরু হয়ে ওঠে, চুলকানির সৃষ্টি হয় এবং ফুঁসকুড়ি হতে পারে। শরীরের যেকোনো স্থানেই চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। তবে হাত-পা মুখে বা পেটের ত্বকে এ রোগ বেশি দেখা যায়, চুলকাতে বেশ মজা লাগে। তবে চুলকিয়ে ঘা বানিয়ে ফেলার স্বভাব থাকলে এখুনি সাবধান হোন। কারণ ক্ষণিকের স্বস্তি আপনার সারা জীবনের অশান্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেকেই কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান দীর্ঘ সময় ধরে চুলকান। সে ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো, এই পরিস্থিতিতে একজিমা থেকে শুরু করে কিডনি ফেইলিওর, এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে!

একজন অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং তিনি আপনার চর্মরোগকে বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা করবেন, যাতে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। নিচে কিছু সাধারণ চর্মরোগের নাম লিপিবদ্ধ করা হল। 

ব্রণ

একটি খুব সাধারণ চর্মরোগ, যা ত্বকের ছিদ্রে বাধার কারণে সৃষ্ট, সাধারণত পুঁজ গঠনের সাথে থাকে।

পাঁচড়া

পাঁচড়া হল একটি সংক্রামক চর্ম রোগ, যার কারণে প্রচণ্ড চুলকানি হয়। এটি রাতে বেশী বাড়তে থাকে এবং ছোট ছোট লাল লাল ফুসকুড়ি উঠতে থাকে। এটা সাধারণত ছোট ছোট মাইটসের কারণে হয়, যা ত্বকে গর্ত সৃষ্টি করে।

ডার্মাটাইটিস

এটি ত্বকের একটি প্রদাহ এবং একজিমা, খুশকি এবং ফুসকুড়ির মতো অনেক ধরনের হতে পারে।

একজিমা

এটোপিক ডার্মাটাইটিস নামেও পরিচিত। একজিমা একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের অবস্থা যা ত্বকে প্রদাহ এবং জ্বালা সৃষ্টি করে। এটি ত্বকের লাল, চুলকানি এবং স্ফীত দাগ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা শুষ্ক, আঁশযুক্ত বা ফাটল দেখা দিতে পারে। একজিমা শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে তবে সাধারণত মুখ, হাত, পায়ে এবং হাঁটুর পিছনে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত একটি দীর্ঘস্থায়ী ধরনের চর্মরোগ, যা বেশিরভাগই শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে ত্বকের একটি অংশ ফুলে যায়, লাল, শুষ্ক, ফাটল এবং চুলকায়।

সোরিয়াসিস

এটা হচ্ছে একধরনের চর্মরোগ যা লাল লাল ছোপ যুক্ত এবং রুপোলি আশের মতো অংশ দ্বারা আচ্ছাদিত ত্বক হয়ে যায়। যে ধরনের চর্মরোগ গুলো আমাদের শরীরকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তার মধ্যে এটা হচ্ছে একটি।

ত্বক ক্যান্সার

মেলানোমা, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা এবং বেসাল সেল কার্সিনোমা সহ ত্বক থেকে উদ্ভূত হয়, প্রাথমিকভাবে সূর্যালোকযুক্ত অঞ্চলে।

☐ বেসাল এবং স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার: মাথা, মুখ, ঘাড়, হাত এবং বাহুতে গঠিত সাধারণ ধরনের ত্বকের ক্যান্সার।

☐ মেলানোমা: একটি কম সাধারণ ধরনের ত্বকের ক্যান্সার, তবে এটি জীবন-হুমকি।

আমবাত


সাধারণত এই চর্মরোগকে বলা হয়ে থাকে ঔষধ বা খাদ্যের প্রতি অ্যালার্জির যে রিয়াকশন আছে সেখান থেকে। এটাতে সাধারণত ত্বক লাল লাল এবং গোটা গোটা হয়ে উঠবে হঠাৎ করে এবং চুলকানিও হবে।

চর্মরোগ কেন হয় ?

চর্ম রোগ শরীরের ভিতর থেকে এবং শরীরের বাহির থেকে হয়ে থাকে। চর্ম রোগ মূলত ছত্রাক জনিত জীবানুর কারণে হয়ে থাকে। আবার জিনগত সমস্যার কারণেও অনেকের চর্মরোগ হয়ে থাকে। অথবা আরেকটি কারণে চর্মরোগ হতে পারে সেটি হল পরিবারের অন্য সদস্যের যদি চর্ম রোগ থাকে তাহলে সেখান থেকে আরেক জনের চর্মরোগ হতে পারে।

শরীরের বাহিরে চর্ম রোগ হওয়ার কারণ হলো শরীরে কোন জীবাণু আক্রমণ করা যেমন অতিরিক্ত ধুলাবালি পড়া আবার বিভিন্ন রকম বিষাক্ত জিনিস শরীরে ডুকলে সেখান থেকে চর্মরোগ তৈরি হতে পারে। নোংরা পানিতে নামলে সেখান থেকে জীবাণু আক্রমন করে এবং চর্মরোগ তৈরি হয়।

এছাড়াও বেশিরভাগ সময় রোগ লাগে না এবং ভেজা হয়ে থাকে এরকম জায়গায় বেশি বেশি থাকলে সেখান থেকে চর্মরোগ হতে পারে।

চর্মরোগেরপ্রধানকারণহল

মানব দেহের ত্বকের উপরিভাগে ব্রণ, ফুসকুড়ি, অ্যালার্জি, একজিমা বা চুলকানি ইত্যাদি নানান ধরনের চর্মরোগে হরহামেশাই বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কখনো কখনো এটি দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করে। বছরের সবসময়ই এই রোগ হতে পারে। শীতকালে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এ সময় শুষ্ক ত্বক ফেটে যায়, আকান্ত স্থান পুরু হয়ে ওঠে, চুলকানির সৃষ্টি হয় এবং ফুসকুড়ি হতে পারে। শরীরের যে কোনো স্থানেই চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে। তবে হাত-পা মুখে বা পেটের ত্বকে এ রোগ বেশি দেখা যায়।


চর্মরোগ অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কম-বেশি ভুগতে হয় সবাইকে। আর অনেক সময়ই কী করতে হবে সেটা না জানার কারণে দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগতে হয়।


মাঝে মাঝে ত্বকে মাকড়সার জালের মতো কৈশিক নালী ফুটে ওঠতে দেখা যায়। বিশেষ করে পা, মুখের ত্বক

ইত্যাদি সংবেদনশীল ত্বকে এই সমস্যা দেখা যায়। মূলত ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে স্পাইডার ভেইনস বা অ্যাজমাজনিত চর্মরোগ সমস্যা দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এছাড়াও সবজি ও ফল-মূলজাতীয় খাবার খেলে ত্বকের এ সমস্যা কমানো যায়। ত্বক ফেটে গেলে হোমিও ওষুধ পেট্রোলিয়াম সেবন করবেন। আর যদি ফেটে পানি বের হয় তবে হোমিও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।


যাদের লিভার বা যকৃতে সমস্যা থাকে তাদের ত্বকে এই ধরনের চর্মরোগ বেশি দেখা যায়। তাই ত্বকে যদি অতিরিক্ত স্পাইডার ভেইনসের সমস্যা হয় তাহলে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।


আমাদের মুখের ত্বকে অনেক তৈল গ্রন্থি রয়েছে। আর বয়ঃসন্ধির সময়ে ত্বকে তেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর সেখান থেকে হয় ব্রণ। লোমক‚পে তেল বেড়ে গেলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ত্বকে ছোট ছোট লালচে গোটা বা ব্রণ হয়। লোমক‚প বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ত্বকে ব্রণ হতে পারে।


অনেকে ব্রণ হলে সেটি নিয়ে বেশি চাপাচাপি করে থাকেন। ফলে ত্বকে বা চর্মে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। তাই ব্রণ হলে হাত না লাগানোই ভালো। তাছাড়া অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার থেকেও বিরত থাকতে হবে। দিনে দুইবার ত্বক পরিষ্কারের জন্য হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে।


চর্মরোগ ব্রণের সমস্যা কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসও প্রয়োজন। বাদাম ও শস্যজাতীয় খাবার, ফলমূল, মাছ, সবজি ইত্যাদি খাবার ত্বকের জন্য উপকারি। তাছাড়া ত্বক সুস্থ রাখতে প্রচুর পানি পান করাও জরুরি।
চুলকানিও এক ধরনের চর্মরোগ। একজিমার কারণেও ত্বক লাল হয়ে যায় এবং চুলকানি হয়। শরীরের বিভিন্ন সন্ধিস্থলে মূলত একজিমা বেশি হতে পারে। একজিমা শরীরের ভেতরে ও বাইরে, দুই কারণে হতে পারে। পোকার কামড়, হেয়ার ডাই ব্যবহার বা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে একজিমা হতে পারে। আবার খুশকি বা এ ধরনের একজিমা হতে পারে অভ্যন্তরীণ কারণে।


শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগতভাবেই একজিমা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে জন্মের সময়ই একজিমা দেখা যায়। এতে করে বাচ্চাদের গাল লাল হয়ে যায় এবং ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এদের গোসল করানোর সময় সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। আর তাদের ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
অনেক সময় পোকার কামড় বা একজিমার প্রদাহ হলে জীবাণুনাশক তরল বা ক্রিম ব্যবহার করা হয়। তবে এটি করা উচিত নয়। বরং লাল হয়ে যাওয়া স্থানে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।


ছত্রাকজনিত চর্মরোগে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসকারীরাই বেশি ভোগেন। তবে ইদানীং অনেকইকে ভুগতে দেখা যায়। শুকনো চুলকানিতে হোমিও ওষুধ আর্সেনিক আয়োড সেবন করে উপকার পাবেন। আর যদি আক্রান্ত স্থান হতে পানি বের হয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।


পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, নিয়মিত গোসল করা, আক্রান্ত স্থানকে ধুলাবালি ও জীবাণুমুক্ত রাখা, গমর ও ধুলোবালি এড়িয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যারা দ্রæত অরোগ্য লাভ করতে চান তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করবেন। ইনশাল্লাহ চর্মরোগ সেরে যাবে। বেশি সমস্যা মনে হলে আজই অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন। চর্মরোগ হোমিও চিকিৎসায় সহজেই নিরাময়যোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *