বাচ্চার যে শুধুমাত্র অনিয়মিত মলত্যাগ না করলেই কোষ্ঠকাঠিন্য হবে তা নয়। বরং অনেক বাচ্চা রোজই মলত্যাগ করছে অথচ তা স্বাভাবিক নয়, মলত্যাগ করতে কারও যদি অসুবিধা হয় অথবা বেশি সময় লাগে, প্রকৃতপক্ষে একেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। তাই অনেক অভিভাবকই সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ বুঝতে দেরি করে ফেলেন।

আবার কেউ কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ছোট বয়স থেকে বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়াতে চান না। কিন্তু তাতে শিশুর কষ্ট বাড়তেই থাকে। অনেক সময় অসুস্থতার কারণে কম খাওয়ার ও অপর্যাপ্ত পানি পান করায় কিছুদিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে এই অসুখটি আসলে বয়স্কদের অসুখ হিসাবেই বেশি পরিচিত।

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, প্রতিকারই বা কী- সে সম্পর্কে ধারণা হয়তো আমাদের অনেকেরই নেই। অনেক শিশু আছে, দু-তিনদিন পায়খানা না করেও ভালো থাকে।

আবার অনেকের একদিন পায়খানা না করার কারণেই পেট ফুলে যেতে পারে। তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি ভোগে। এ শিশুর কয়েক মাস ধরে পায়খানার সমস্যা থাকে এবং বেশ কয়েক দিন পরপর পায়খানা হয়। সব সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এর কারণ বের করে চিকিৎসা করাতে হয়।

কারণ

অনেকদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ক্রনিক কনস্টিপেশনের বেশকিছু কারণ রয়েছে। যেমন-

☐ খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণ : কম আঁশযুক্ত খাবার খেলে অনেক শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। গরুর দুধ খেলেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়

☐ শারীরিক ত্রুটি : অ্যানোরেকটাল স্টেনোসিস বা মলদ্বার জন্মগতভাবে বন্ধ থাকলে।

☐ স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটি

☐ মানসিক প্রতিবন্ধী হলে।

☐ স্নায়ুর সমস্যা বা সেরেব্রাল পলসি থাকলে।

☐ জন্মগতভাবে পেটের সামনের মাংস না থাকলে।

☐ শরীরের শক্তি কমে যাওয়া বা হাইপোটনিয়া হলে।

☐ হাইপোথাইরয়েডিজম হলে।

☐ বহুমূত্র রোগ হলে।

☐ শরীরে ক্যালসিয়াম বেশি হলে।

☐ রেনাল টিউবুলার অ্যাসিডোসিস হলে।

শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণ

☐ পেটে ব্যথা : মাঝে মধ্যে থাকবে, আবার কিছু সময় থাকবে না।

☐ খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, ক্ষুধামন্দা ভাব দেখা দেবে।

☐ বমি হতে পারে বা বমি ভাব থাকতে পারে।

☐ শরীরের ওজন কম বাড়বে।

☐ পরীক্ষা করলে দেখা যাবে পেটটা শক্ত ও ফুলে আছে। পেটের ওপর হাত দিলে মল শক্ত অনুভূত হবে। মলদ্বার আর্দ্র থাকবে

এবং স্ফিংটার খোলা থাকবে। এর ওপরই মল আটকে থাকে।

অভিভাবক হিসাবে আপনার করনীয়

১. শিশুকে শান্তভাবে মলত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশু যেন ব্যথা না পায় এবং মা-বাবা যেন চিন্তামুক্ত থাকেন, অস্থিরতায় না ভোগেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। প্রয়োজনে বাচ্চাদের মলত্যাগের জন্য পুরস্কৃত করে উৎসাহিত করতে হবে।

২. শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে এবং আঁশযুক্ত খাবার দিতে হবে।

৩. শিশুকে বেশী করে পানি এবং তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

৪. শিশুকে বেশী করে শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়াতে হবে।

৫. শিশুর নিয়মিত মল ত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৬. সঠিক প্রণালীতে দুধ তৈরী করে খাওয়াতে হবে।

৭. শিশুকে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে।

হোমিওসমাধান :

রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষন ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক সঠিকভাবে লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে কোষ্ঠবদ্ধ রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *