গর্ভাবস্থায় মায়ের ঘুম: প্রয়োজন সঠিক নিয়ম জানা

খাওয়া-চলার মতো গর্ভকালীন সময়ে মায়ের ঘুমের ব্যাপারেও চাই বিশেষ যত্ন। গর্ভধারনের পর নিজের স্বাস্থ্য, সন্তান পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়তি সচেতন হওয়া দরকার। কারণ একজন মায়ের সুস্থতা ও স্বাভাবিকতার উপর নির্ভর করেই একটি সু্স্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের সঠিক ও সুন্দর ঘুমের জন্য প্রয়োজন সঠিক নিয়ম জানা।

গর্ভবতী মায়ের ও পেটের শিশুর শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য মায়ের ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন গর্ভবতী যদি ভালোভাবে ঘুমোতে না পারেন তবে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। জেনে নিন কিভাবে সুন্দর ও সঠিক উপায়ে গর্ভবতী মায়ের ঘুম নিশ্চিত করবেন। 

(১) ব্যয়াম করন প্রতিদিনঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা সাধারন ব্যায়াম সঠিক সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখা উচিৎ, গর্ভবতী মায়েরা যাতে কোন ধরনের ভারী ব্যায়াম না করেন।

(২) রাতের রুটিনঃ রাতের খাবার শেষ করার পর কিছু কাজের জন্য আলাদাভাবে রুটিন তৈরী করুন। নিজেকে আনন্দিত ও ব্যস্ত রাখতে পছন্দ অনু্যায়ী লেখালেখি, গান কিংবা সৃজনশীল কাজে সময় দিন। এটি আপনার ঘুম আনতে অবশ্যই সহায়তা করবে।

(৩) টিভি/ কম্পিউটার থেকে বিরতিঃ ঘুমাতে যাবার অন্তত এক ঘন্টা আগে আপনার টিভি, কম্পিউটার সুইচ অফ করুন। এসব ডিভাইস থেকে একটুখানি বিরতির পর ঘুমোতে যান।

(৪) বালিশের ব্যবহারঃ ঘুমানোর ক্ষেত্রে মায়ের আরাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন! তাই, আপনার যত খুশি বালিশ ব্যবহার করুন। পায়ের নিচে, পিঠে বালিশ আপনার গর্ভকালীন ব্যথা থেকে দিতে পারে কিছুটা স্বস্তি ও আরামের ঘুম।

(৫) পাশ ফিরে শোয়াঃ বাম দিকে কাত হয়ে শোয়া মা এবং শিশু দুজনের জন্যই অত্যন্ত সহায়ক। তবে সারা রাত একপাশ হয়ে থাকাটাও উচিৎ নয়। তাই মায়ের স্বাচ্ছন্দ্য ও শিশুর অবস্থান ঠিক রেখে সাবধানে শোয়াই বাঞ্ছনীয়।

(৬) ঠান্ডা পরিবেশঃ ঘুমোনোর সময় আপনার শোবার ঘর ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করুন। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, শোবার ঘরের তাপমাত্রা ১৬ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে তা ভালো ঘুমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

(৭) ঘুমের আগে হালকা খাবারঃ ঘুমোতে যাবার আগে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর হালকা কিছু নাস্তা খাবার চেষ্টা করুন।

(৮) সন্ধ্যা ৭ টার পর আর তরল খাবার নয়ঃ সারাদিন প্রচুর পরিমানে পানি ও তরল খাবার গর্ভবতী মায়েদের শরীর ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তবে সন্ধ্যা সাতটার পর এর মাত্রা কমিয়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। এতে মায়ের রাতের বেলা বাথরুমে যাবার প্রয়োজন কম হবে আর তাকে নির্বিঘ্ন ঘুমে সহায়তা করবে।

(৯) সঠিক সময়ে সঠিক খাবারঃ পুরো গর্ভাবস্থা চলাকালীন মায়ের খাবারে দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনে অল্প অল্প করে স্বাস্থ্যকর খাবার মা’কে রাতে গ্যাস্ট্রিকজনিত ব্যথায় রাত জাগা থেকে মুক্তি দেবে।

(১০) কথা বলুনঃ গর্ভাবস্থায় অনেক কিছুই একজন মায়ের মনে আসতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তাঁর রাতের ঘুম নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই নিজের ভাবনা-চিন্তা সব আপনার সঙ্গী কিংবা মা-বাবা কিংবা বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন। এতে আপনার দুশ্চিন্তা কমবে, ঘুমও ভালো হবে।

একজন গর্ভবতীর জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। তাই এক্ষেত্রে মা নিজে এবং তাঁর কাছের সব মানুষকে ঘুমের ব্যপারে খেয়াল রাখতে হবে।



গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা । কারণ ও সমাধান

গর্ভাবস্থায় মায়েদের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা হলো ঘুমের সমস্যা। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন ও শারীরিক নানা পরিবর্তনের সমস্যার জন্য স্বাভাবিক ঘুম ঠিক মতো হয় না। আর এসবের সাথে থাকে মানসিক দুশ্চিন্তা, অনাগত শিশুর আগমন নিয়ে উত্তেজিত থাকা, ক্রমাগত বাথরুমে যাওয়া আসা এবং আরও সব আনুষঙ্গিক সমস্যা। এসব কিছু মিলিয়ে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় গড়ে প্রতি ১০ জনের প্রায় ৮জন মহিলাই গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। এই সময়ে এমনটি লাগার আরও একটি কারণ হলো- আপনার শরীরের বিপাকীয় পরিবর্তন। ভ্রুনের বৃদ্ধির জন্য এসময় অনেক বেশী শক্তি খরচ হয় যা আপনার শরীরকে ক্লান্ত করে দেয়।

প্রথম ট্রাইমেস্টার

সমস্যা:

ঘন ঘন বাথরুম এ যাওয়ার প্রয়োজন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় শরীরে বর্ধিত প্রজেস্টেরন বারবার প্রস্রাব হওয়ার অন্যতম কারণ। প্লাস কিডনি এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৫০% রক্ত ফিল্টার করে যার মানে হচ্ছে আরও বেশি প্রস্রাবের চাপ হওয়া। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ক্রমবর্ধমান জরায়ু আপনার মূত্রাশয়ের সাথে এতো বেশি লেগে থাকে যার কারণে বারবার বাথরুম অনুভূত হয়। এর কারণে গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা হয়।

শুয়ে কমফোর্টেবল ফিল না করা প্রেগন্যান্ট মহিলাদের অন্যতম বড় সমস্যা হল ঘুমাতে এসে বিছানায় আরাম না পাওয়া। এর কারণ হিসেবে আপনার শরীরের পরিবর্তন, স্তনের পরিবর্তন, মানসিকভাবে অস্থির থাকা ইত্যাদিকে দায়ী করা যায়। বিশেষ করে আপনার যদি উপুড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে তাহলে এ সময় এভাবে ঘুমানো আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে ।

বমি বমি ভাব প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আপনার শরীরে হুট করেই অনেক হরমোনের পরিবর্তন, শরীরে নানা অংশের আমূল পরিবর্তন ও ঘ্রাণ শক্তির প্রখর বৃদ্ধি সব মিলিয়ে একজন গর্ভবতী মহিলা বারবার বমি ভাবের সম্মুখীন হয়। রাতে ঘুমাতে এসেও এই বারবার বমি বমি ভাব ঘুমাতে বাধা সৃষ্টি করে।

সমাধান:

ঘুমের রুটিন তৈরি করুন গর্ভাবস্থায় ঘুমের রুটিন তৈরি করুন। দিনে অন্তত একবার বা দুইবার হালকা ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। তবে তা দুপুর ২ টা থেকে ৪ টার মদ্ধে হলে ভাল। নয়তো রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। একবারে বেশী ঘুমানোর চাইতে চেষ্টা করুন দুইবার কম সময় করে ঘুমানোর।

সন্ধ্যার পর পানি কম খান সারাদিন বেশি করে পানি খেতে হবে। সন্ধ্যার পর পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। ফলে বার বার প্রস্রাব হবে না এবং গর্ভবতী স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাতে পারবেন। আপনার যদি চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তবে তা শুধুমাত্র সকালের দিকে খাওয়ার চেষ্টা করুন। চা বা কফি অতিরিক্ত প্রস্রাব এর কারণ। এগুলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ফলে ভালো ঘুম হয় না।

হাতের কাছে কিছু খাবার রাখুন সারাদিন যাই খান রাতে অবশ্যই আপনার খুব কাছে হালকা কিন্তু হেলদি এমন কিছু খাবার মজুদ করে রাখুন। যেমন ফ্রেশ ফলমূল, চিজ, সিদ্ধ ডিম, হেলদি স্ন্যাকস, সামান্য কিছু টোষ্ট সাথে বাটার। ক্ষিধা পেলে এগুলো কিছুটা খেয়ে শুয়ে পরুন দেখবেন পরবর্তীতে আরামে ঘুমাতে পারছেন।

ব্যায়াম করুন প্রতিদিন বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা সাধারন ব্যায়াম সঠিক সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখা উচিৎ, গর্ভবতী মায়েরা যাতে কোন ধরনের ভারী ব্যায়াম না করেন। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করলে তা আরামদায়ক ও গভীর ঘুম আনতে সহায়তা করবে। গর্ভবতী মা ইয়োগা করলে তা অন্যান্য উপকারের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা মোকাবেলায় ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। ব্যায়াম সাধারানত সকালে বা বিকেলে করা উচিত। সন্ধ্যার পর করলে তা ইনসমনিয়ার কারণ হতে পারে।

দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার

সমস্যা:

বুক জ্বালা পোড়া করা গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের তারতম্যর কারণে বুক জ্বালা পোড়া হতে পারে। বলতে গেলে গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালা পোড়া অন্যতম সাধারণ সমস্যা। প্রেগন্যান্সি হরমোনের কারণে Lower esophagel sphincter শিথিল হয়ে যাই যার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড গলনালির দিকে বের হয়ে আসে। এছারাও জরায়ুর বৃদ্ধির ফলে অনেক সময় পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি হয়ে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসতে পারে যার ফলে বুক জ্বালা পোড়া করে।

লেগ ক্রাম্পস– প্রেগন্যান্ট মহিলারা বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে যে সমস্যা ফেস করে থাকেন সেটা হল লেগ ক্রাম্পস বা পায়ে ভীষণ অস্বস্তিকর ব্যথা অনুভূত হওয়া। মূলত এটা পায়ে রক্তসঞ্চালন জনিত সমস্যা ও প্রেগন্যান্ট অবস্থায় শরীরের অতিরিক্ত ওয়জন জনিত কারণে হয়ে থাকে। যদিও এই সমস্যা দিনেও দেখা দেই তবে সবচেয়ে বেশি হয় এটা রাতে আর যার কারণে গর্ভবতী মহিলা ঘুম না হওয়া ও বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ে ভোগেন।

দুঃস্বপ্ন দেখা গর্ভাবস্থায় মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এসময় মনের ভেতরে অজানা আশংকা বা ভয় তৈরী হয়। এই কারণেও ঠিকমত ঘুম হয়না।  অনেকেই এ সময় অনেক দুঃস্বপ্ন দেখেন যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।

সমাধান:

খাওয়ার পরপরই না শোওয়া গর্ভাবস্থায় খাদ্য পরিপাক হতে অনেক সময় লাগে। তাই এ সময় খাওয়ার পর অন্তত চার ঘণ্টা না শোওয়াই ভালো। এতে পাকস্থলী থেকে নির্গত এসিড নিচের দিকেই থাকে। বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকলে সকালে বেশী খেয়ে রাতে কম খেলে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

ভাজা পোড়া খাবার পরিহার করুন  ভাজা পোড়া খাবার পরিহার করুন এবং বেশি মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

চাকফি পান নিয়ন্ত্রন করুন  চকলেট, চা, কফি বর্জন করতে হবে। এগুলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ফলে ভাল ঘুম হয়না। খেলেও সকালের দিকে খাওয়া যেতে পারে। সন্ধ্যার পর খাওয়া একবারেই অনুচিত।

ব্যায়াম করন প্রতিদিন বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা সাধারন ব্যায়াম সঠিক সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখা উচিৎ, গর্ভবতী মায়েরা যাতে কোন ধরনের ভারী ব্যায়াম না করেন। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করলে তা আরামদায়ক ও গভীর ঘুম আনতে সহায়তা করবে। গর্ভবতী মা ইয়োগা করলে তা অন্যান্য উপকারের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা  সমাধানে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।

 তৃতীয় ট্রাইমেস্টার–  

সমস্যা:

ব্যাক পেইন গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের কারণে এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে ব্যাক পেইনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থার একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্তও কখনও কখনও থাকে ব্যাক পেইন। ৬০ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই ব্যাক পেইন এর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

ঘন ঘন প্রস্রাব জরায়ু আকারে বড় হওয়া এবং বাচ্চার নিচের দিকে নেমে যাওয়ার কারণে এ সময় আবার মুত্রথলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই বার বার প্রস্রাব এর সমস্যা এসময় আবার দেখা দেয়।

শ্বাস প্রশ্বাস এ সমস্যা গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহ পার হয়ে যাবার পর অনেকক্ষণ চিত হয়ে শুয়ে থাকলে আপনার জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হতে পারে, কারণ গর্ভস্থ শিশুটির সকল চাপ তখন রক্তনালীগুলোর ওপর পড়ে। এ সময় আপনার নাসারন্দ্রহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যার কারণে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।

রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম (RLS) – প্রায় ২০ ভাগ মায়েদের একধরনের অদ্ভুত অনুভূতি হয় যখন তাদের মনে হয় তাদের পায়ের ভেতন পিঁপড়া হাঁটছে। সাধারণ আয়রন এর স্বল্পতার কারণে এমনটা হয় এবং এসব ক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোটা অসম্ভব হয়ে ওঠে ।

সমাধান:

ব্যায়ামব্যাক পেইন দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল ব্যায়াম। নিজের পেশীকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি শরীরের সর্বস্তরের সুস্থতা খুব সহজেই শিশুকে বহন করার শক্তি যোগায়। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম হল হাঁটা, সাতার কাটা এবং আসতে আসতে সাইকেল চালান। আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে ব্যায়াম করা শুরু করেন।

বাম কাত হয়ে শোওয়া– বাম কাত হয়ে শোয়াটা আপনার বাচ্চার জন্যও ভালো কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্ল্যাসেন্টা দিয়ে সহজেই বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে। আপনার কিডনিও বর্জ্য ও অতিরিক্ত ফ্লুইড আপনার শরীর থেকে বের করে দেয়ার জন্য কাজ করতে পারে। এর ফলে আপনার হাত-পা-গোড়ালি ফুলে যাবার (oedema) সম্ভাবনাও কম থাকে।হাঁটু ভাজ করে বাম কাতে শুয়ে পড়ুন এবং দুই হাঁটুর মাঝখানে নরম বালিশ রাখুন। এতে করে আপনার হিপ ও পেলভিস-এর পেশীর ওপর চাপ কম পড়বে।  পেটের নিচে লম্বা বালিশ দিতে পারলে পিঠের দিকে টান কমায়। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি খেয়াল করেন যে আপনি চিত হয়ে ঘুমাচ্ছেন, তাহলে সাথে সাথেই বাম কাতে ফিরে যেতে পারেন। ঘুমানোর সময় পাশে আরেকটা বালিশ দিয়ে নিতে পারেন যার কারণে আপনি ঘুমের মধ্যে খুব বেশি নড়তে পারবেন না।যদি বাম কাতে লম্বা সময় শুয়ে থাকার কারণে আপনার হিপে চাপ পড়ে, তাহলে আপনার ম্যাট্রেসের ওপর দেয়ার জন্য একটা নরম ফোম কিনে নিতে পারেন। এতে আপনি আরাম পাবেন আর বাতাস সঞ্চালনও সহায়ক হবে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা অনলাইনেও আপনি মাপ মত ফোম ম্যাট্রেস পাবেন।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে যদি বিছানায় শুয়ে আরাম নাই পান, তাহলে আরামদায়ক আর্মচেয়ারে কিংবা সোফায় এক কাতে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। সমাধান হিসেবে এটা যে সবসময় কার্যকরী হয় তা নয়, তবে ডাক্তার আপনাকে চেষ্টা করে দেখতে বলতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন – ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত গর্ভাবস্থায়। ফলে হাত পায়ের ব্যথা কমে আসে এবং খিল ধরা বন্ধ হয়। তবে প্রথম তিন মাসে আয়রণ ও ক্যালসিয়াম দেওয়া উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা বড় একটি সমস্যা। ভালো ঘুম না হলে খুব খারাপ লাগে। তখন কোন কিছুই আর ভালো লাগেনা। তাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা সমাধানের জন্য উপরেরগুলো ছাড়াও আরও কিছু টিপস অবলম্বন করে দেখতে পারেন-

রাতের রুটিনঃ রাতের খাবার শেষ করার পর কিছু কাজের জন্য আলাদাভাবে রুটিন তৈরী করুন। নিজেকে আনন্দিত ও ব্যস্ত রাখতে পছন্দ অনু্যায়ী লেখালেখি, গান কিংবা সৃজনশীল কাজে সময় দিন। এটি আপনার ঘুম আনতে অবশ্যই সহায়তা করবে।

টিভি/কম্পিউটার ও মোবাইল থেকে বিরতিঃ ঘুমাতে যাবার অন্তত এক ঘন্টা আগে আপনার টিভি, কম্পিউটার সুইচ অফ করুন। এসব ডিভাইস থেকে একটুখানি বিরতির পর ঘুমোতে যান।

বালিশের ব্যবহারঃ ঘুমানোর ক্ষেত্রে মায়ের আরাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। তাই, আপনার যত খুশি বালিশ ব্যবহার করুন। পায়ের নিচে, পিঠে বালিশ আপনার গর্ভকালীন ব্যথা থেকে দিতে পারে কিছুটা স্বস্তি ও আরামের ঘুম। বালিশের অবস্থান এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা শুধু মাথা নয়, মায়ের পেট ও পা কেও সমানভাবে আরাম দিতে পারে। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত বালিশ কিনতে পাওয়া যায় বা বানিয়ে নেওয়া যায়। তা সম্ভব না হলে পর্যাপ্ত বালিশের সাপোর্ট থাকা জরুরী।

ঠাণ্ডা পরিবেশঃ ঘুমোনোর সময় আপনার শোবার ঘর ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করুন। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, শোবার ঘরের তাপমাত্রা ১৬ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে তা ভালো ঘুমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

হালকা মাসাজঃ ঘুমের আগে শরীরে ম্যাসাজ করলে কিংবা পেটে বডি অয়েল (অবশ্যই গর্ভকালীন সময়ের উপযোগী) ম্যাসেজ মায়ের আরামদায়ক ঘুম আনতে ভালো ভূমিকা রাখবে।

কথা বলুনঃ গর্ভাবস্থায় অনেক কিছুই একজন মায়ের মনে আসতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তাঁর রাতের ঘুম নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই নিজের ভাবনা-চিন্তা সব আপনার সঙ্গী কিংবা মা-বাবা কিংবা বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন। এতে আপনার দুশ্চিন্তা কমবে, ঘুমও ভালো হবে।

গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা একটি বড় সমস্যা। তাই এক্ষেত্রে মা নিজে এবং তাঁর কাছের সব মানুষকে ঘুমের ব্যপারে খেয়াল রাখতে হবে। একজন গর্ভবতী যদি ভালোভাবে ঘুমোতে না পারেন তবে এটি তাঁর ভবিষ্যৎ মাতৃত্বের জন্য নিজেকে তৈরীর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য যথাযথ ঘুমের নিশ্চিত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *